ইমরান হাসান বিন হাবিব :

কক্সবাজার। নামেই এক অদ্ভুত মাদকতা! কে জানে, জন্মভূমি বলেই হয়তো। নামখানি শুনলেই বুকের রক্ত অজান্তেই ছলাৎ করে উঠে, শিরদাঁড়া বেয়ে কিলবিলে কিছু একটা নেমে যায় বা উঠে যায়। হৃদয়টা মুচরে উঠে আদ্র আবেগী এক পরম মমতায়। কক্সবাজারে জন্মেও যারা বাইরে থাকেন কিংবা দীর্ঘদিন যোগাযোগশূণ্য কেবলমাত্র তারাই বুঝবেন এই আবেগখানি, ছিটে বর্ণও বাড়িয়ে বলিনি মোটেও। সেই জন্মস্থান বিচ্যূত সুদুর রূঢ় জীবনে প্রিয় জন্মভূমির যে’কজনার কথা প্রায় প্রায় উচ্চারিত হয়, চর্চিত হয় তাদেরই একজন জননেতা মরহুম খালেকুজ্জামান।
বাবার কাছে, গুরুজনদের কাছে অনেক অনেক শুনেছি তাঁর কথা। নব্বই পরবর্তি রাজনীতিবিদদের মধ্যে খুব কম মানুষ সম্পর্কেই অমন প্রশংসা স্তুতি শোনা যায়। জননেতা খালেকুজ্জামানকে দেখার সৌভাগ্য আমার কখনো হয়নি তবে তাঁর সম্পর্কে এত বেশি শুনেছি যে তাঁকে জানার এক প্রবল আগ্রহ ভেতরে ভেতরে বোধ করেছি সবসময়। যদিও ব্যস্ততা এবং সময়ের অভাবে এতদিন সে সুযোগ ঘটেনি যা কিনা এবার করে দিলো তাঁর ১৭তম মৃত্যূবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নেয়া ‘স্মরণ’ উদ্যোগ। ভাবলাম এই-ই সুযোগ, তাঁর সম্পর্কের জানার জন্যে পরিচিতজনদের কাছে ধর্ণা দেয়া শুরু করলাম। কেউ স্মৃতিকথায়, কেউ তাঁর সম্পর্কে প্রকাশিত ক্রোড়পত্র বা পত্রিকার ‘কাটিং’ দিয়ে, কেউবা অনলাইনের লিন্ক দিয়ে সাহায্য করলেন। শুরু হলো তাঁকে জানার পালা। ধীরে ধীরে যতটা তাঁকে জানছি, কখনো বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছি, কখনো রোমাঞ্চিত হয়েছি, তীব্র আকর্ষন বোধ করেছি আর সবশেষে জেগেছে আফসোস ক্ষণজন্মা বহু প্রতিভার অধিকারি জেল্লাময় এই মাটি ও মানুষের নেতা আর নেই বলে।

প্রথমেই আমাকে আকর্ষন করেছে তাঁর বনেদি বংশ পরিচিতি, ঈর্ষণীয় শিক্ষাজীবন এবং বর্ণিল পেশাগত কৃতি! সে কি সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার তাঁর! কি শিক্ষাজীবনে কি পেশাগত জীবনে, কি নেই তাঁর প্রাপ্তি! স্বক্ষেত্রে কোথায় ছিলোনা তাঁর পদচারনা! যখন যেখানে হাত দিয়েছেন সোনা ফলেছে। তাঁর সমকালীন বা বর্তমান রাজনীতিতে অমন জেল্লাময় সুউচ্চ শিক্ষিত এবং সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের অধিকারি আছেন ক’জনা? কিঞ্চিত শ্লাঘাও বোধ করেছি আমরা উভয়েই ধানমন্ডি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে।

পরম বিস্ময়ে পর্যবেক্ষন করেছি একজন প্রখর মেধাবী হাই প্রোফাইল ক্যারিয়ারিস্টের সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে মাটি ও মানুষের নেতা হয়ে উঠা! রাজনীতিটা তাঁর রক্তেই ছিলো। পিতা মরহুম জননেতা সাবেক মন্ত্রি মৌলভি ফরিদ আহমেদের মতন তিনিও কক্সবাজারের মানুষকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছিলেন পরম মমতায়। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর থেকে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি ছিলেন গণ মানুষের প্রতি উৎসর্গিত প্রাণ এবং তাঁর মৃত্যূও হয়েছে সেই জনতার মাঝেই। পিতার মতনই চারিত্রিক দৃঢ়তা, বাগ্মীতা এবং বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব ছিলো তাঁর চরিত্রের অন্যতম দিক। তাঁর অনুপম সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের আকর্ষনে খুব সহজেই মানুষ তাঁর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যেতো। তাইতো ১৯৯১ থেকে ২০০১, মাত্র ১০বছরের এই স্বল্প রাজনৈতিক জীবনেই হয়ে উঠেছিলেন পিতারই মতন কক্সবাজারের গণমানুষের এক অবিসংবাদিত গণ নেতা। ‘৯১’এর নির্বাচনের পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কক্সবাজার জেলার হাল ধরেছিলেন। গ্রাম থেকে গ্রামে, ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে তিনি দ্বারে দ্বারে ছুটে বেড়িয়ে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করেছিলেন কক্সবাজার বিএনপিকে। আজকের কক্সবাজার বিএনপি’র যে সুদৃঢ় অবস্থান, স্বয়ং সভানেত্রী যে কক্সবাজারের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে শ্লাঘা বোধ করেন তা কিন্তু মরহুম খালেকুজ্জামান সাহেবেরই অবদান। সুবিধাবাদী, স্বার্থান্ধ নোংরা রাজনীতিতে অর্থের ছড়াছড়ি, অস্ত্রের ঝনঝনানি, স্বজনপ্রীতি আর আত্মীয়করণ, কালোবাজারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানিতে কলুষাচ্ছন্ন রাজনীতির প্রতি মানুষ যখন বীতশ্রদ্ধ ঠিক তখনি জাতীয়তাবাদী দলের পতাকা হাতে জনাব খালেকুজ্জামানের আগমন ঘটলো ঠিক যেনো উল্কার মতন! শান্ত সৌম্য চিত্তে জনতাকে কাছে ডাকলেন তিনি। দৃঢ় কন্ঠে ঘোষনা করলেন নয়া আশার বাণী; ”আমি অর্থের রাজনীতি করি না। আমি অস্ত্রের রাজনীতি করি না। আমার রাজনীতি ভালবাসার রাজনীতি। আমার রাজনীতি মানুষের কল্যাণের রাজনীতি।”
দ্বিধাগ্রস্ত জনতা তাঁকে বিশ্বাস করলেন। কেটে গেলো নিস্তেজতা। সূচনা হলো নয়া দিগন্তের। এ’দশ বছরে কক্সবাজারের রাজনীতির এক আমূল গুণগত পরিবর্তন আসলো। তাঁর ক্যারিশমেটিক ব্যক্তিত্বের জেল্লায় কক্সবাজারের তারুণ্যের মাঝে শুরু হলো আদর্শিক রাজনীতির চর্চা। রাজনৈতিক কর্মীরা সেই প্রথাগত টেন্ডারবাজি, দলবাজী, চাঁদাবাদি, মস্তানি, সন্ত্রাস ছেড়ে শুরু করলো নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির সুস্থ প্রতিযোগিতা। ন্যায়ের ক্ষেত্রে যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন অনড়, অটল, অবিচল। নীতির প্রশ্নে কি স্বজন কি দলীয়, কাউকেই তিনি ছিটে ছাড় দেননি জীবনে। তাঁর পরম প্রতিপক্ষরাও কোনদিন তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করতে পারেন নি। ছাত্র রাজনীতি করার সুবাদে অনেক এমপি পুত্রের সঙ্গেই আমার সখ্যতা ছিলো। আবার জামান পরিবারের অনেকেই ছিলো আমার ছোটবেলার খেলার সাথী। সেইসব এমপি পুত্র ও পরিবার-পরিজন আর জামান পরিবারের আমার শৈশবের চিরচেনা সাথীদের মধ্যে ব্যবধান আকাশ -পাতাল। এমপি পরিবারের সদস্য হয়েও জামান পরিবারের কেউ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা দুর্ণীতির সাথে জড়িত ছিলো তা চরম শত্রুও কোনদিন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেনা। আর দেখাদেখি এই সুস্থ চর্চার প্রতিফলন পড়েছিলো প্রতিপক্ষের রাজনীতিতেও। হবেনাই বা কেনো? প্রতিপক্ষের প্রতি ছিলো তাঁর সমান সমীহ এবং শ্রদ্ধাবোধ। ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে রামু উপজেলা মিলনায়তনে নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে উপজেলা কর্তৃপক্ষ সব দলের নেতা এবং এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের এক সভা আহ্বান করে। সে সভায় জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ”আমি সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি না, আমার দলে সন্ত্রাস নেই। আমার প্রতিপক্ষ জনাব মোস্তাক আহমদ চৌধুরীও একজন ভালো মানুষ। আমি জানি, তিনিও সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। তাঁর দলও সন্ত্রাসীদের পশ্রয় দেয় না। নির্বাচনে ইনশা-আল্লাহ আইন-শৃঙ্খলার কোন বিঘ্ন ঘটবে না। এ দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে।”
অথচ সম্প্রীতির রাজনীতির তাঁর এই যাত্রাপথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ ছিলোনা। চলার পথে বহুবার তিনি প্রতিপক্ষ এবং নিজদলীয় কোন্দলে মত্ত বিপথগামীদের সন্ত্রাসী হামলা এবং নানাবিধ অত্যাচারের মুখোমুখি হয়েছেন। হয়েছিলেন রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত, তবুও কভু দমে যান নি, পিছ পা হন নি। মোকাবেলা করেছেন বুক চিতিয়ে সুদৃঢ় চিত্তে প্রকৃত নেতার ন্যায়। তিনি দলের ভিতর হতে যেমন বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন, তেমনি দলের বাহির হতেও প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করেছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে এ শান্ত শিষ্ট লোকটি নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছেন। অশালীন ভাষায় গালিগালাজ শুনেছেন এবং লাগামহীন বিশ্রী সমালোচনা সহ্য করেছেন। কিন্তু তিনি কোনদিন প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করেন নাই। আক্রমণ করার জন্য প্ররোচিত করেন নাই। তাঁর শত শত জনসভায় ভুলক্রমেও কারো বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেন নাই। সাধারণ মানুষের একজন হয়ে তাদের সাথে মিশবার চেষ্টা করেছেন। তাদের দুঃখ কষ্টের ভাগী হতে চেয়েছেন। সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষগুলোর সমস্যা লাঘবে কি করা যায় সে ব্যাপারে অনন্তর ভেবেছেন।একবার এক দলীয় কর্মী সভায় সন্ত্রাসীরা বন্দুক এবং ককটেল হামলা চালায়। হামলায় খালেকুজ্জামান নিজে গুলিবিদ্ধ হন। সভা পন্ড করে দিয়ে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। কিন্তু খালেকুজ্জামানের সমর্থনে সভায় আগত তৃণমূল প্রতিনিধিরা দিক-বিদিক ছুটোছুটি করলেও কেউ পালিয়ে যায়নি। পুনরায় সংগঠিত হয়ে শুরু হয় প্রতিনিধ সভা। এসময় শারিরীক ভাবে আহত ও মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত খালেকুজ্জামান উপস্থিত প্রতিনিধিদের লক্ষ্য করে আবেগময় ও হৃদয়গ্রাহী এক বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, ‘সম্মানিত রামু-কক্সবাজারের মুরব্বিগণ, আপনারা আমার পিতৃতুল্য। আমার বাবা আজীবন দেশে ও জাতির জন্য কাজ করে ছিলেন। তিনি নির্মম ভাবে শহীদ হয়েছেন। আজকে আপনাদের সামনেই আমার উপর সন্ত্রসী হামলা হল। তারা আমার বাবার মত আমাকেও দুনিয়া থেকে বিদায় দিতে চেয়েছিল। আল্লাহর মেহেরবানিতে আমি বেঁচে থাকলেও শারীরিক ভাবে আহত এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত। আমার অনেক সহকর্মী ভায়েরা আহত হয়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকার অনেক আরাম আয়েশের জীবন ছেড়ে আপনাদের ভালবাসায় আমি এই কঠিন জীবন বেছে নিয়েছি। রামু কক্সবাজারের মাঠে-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে, পাড়ায়-মহল্লায় আমি আপনাদের পরীক্ষিত বন্ধু। যারা আজকে আমার উপর হামলা করেছে তারা চায় আমি কক্সবাজারের রাজপথ ছেড়ে, আপনাদের ছেড়ে চলে যাই। আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই হামলাকারীরা যা চায় আমি তা করব কিনা ? আপনারা যদি বলেন আমি ঢাকায় ফিরে গিয়ে সেই আরাম আয়েশের জীবন যাপন করব। আর যদি বলেন আপনারা আমার পাশে থাকবেন, আমিও আপনাদের পাশে থেকে জীবন উৎসর্গ করে আপনাদের ভালবাসার মূল্য দিতে চেষ্টা করব।’ তখন সমস্বরে উপস্থিত সবাই জানালেন ‘না। আমরা আপনাকে ছাড়ব না, আপনিও আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন না।’
সবচাইতে বড় কথা হলো ওই ঘটনায় তিনি রক্তাক্ত হলেন, তাঁর সহকর্মীরা আহত হলেন। কিন্তু মামলা হামলার মত কোন ঘটনা করে তিনি তার প্রতিশোধ নিলেন না। তিনি দেখালেন অহিংসা, সৃষ্টি করলেন ভালবাসা ও মমতার সেতু বন্ধন।

তাঁর সেই অহিংস ভালোবাসার রাজনীতির ফল পেয়েছিলো কক্সবাজারের রাজনৈতিক অঙ্গন। সে সময়কার পরিবেশ আর আজকের পরিবেশ বিশ্লেষন করলে যে কেউই তা ক্ষনেই বুঝতে পারবেন। সে সময়ে একজন তরুণ রাজনৈতিক কর্মী স্বপ্ন দেখতো কি করে আদর্শিক চর্চা করে একজন খালেকুজ্জামান হওয়া যায় সেখানে আজকের কক্সবাজারের তরুণ সমাজ স্বপ্ন দেখে কি করে জমির দালালি কিংবা ইয়াবার ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যায়! কিছুদিন আগে আমার এক নেতা বন্ধু আমায় সাক্ষাতের সময় দিলো স্বন্ধ্যায় হোটেল সায়মানের ‘বার’ এ! এ ছাড়া নাকি তার দেখা করার সময় নেই! এই হলো প্রিয় জন্মভূমি কক্সবাজারের আজকের রাজনৈতিক মাঠের হাল হাক্বিকত!!

হালের কথা কইতে গিয়ে মনটা তিতকুটে বিষন্ন হয়ে উঠলো বৈকি। কলম আর এগোচ্ছেনা। অকুতোভয় জননেতা খালেকুজ্জামানকে এই মুহুর্তে বড্ড বেশি ‘মিস’ করছি। ‘বাবা’-হাজীদের রাজত্বে কক্সবাজারে আজ আরেকটা খালেকুজ্জামানের খুব বেশি প্রয়োজন। প্রয়োজন সেই নেতাকে যিনি শুধু ফাঁকা বুলি নয়, যা বলেছেন অক্ষরে অক্ষরে তা দেখিয়ে গেছেন। কথা দিয়েছিলেন প্রয়োজনে জনতার জণ্যে প্রাণ দেবেন। তিনি কথা রেখেছেন। চিকিৎসকের শত নিষেধ সত্বেও জনতার কাতারে গিয়েই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বলেছিলেন, ‘যেখানে আমার জন্যে সভায় লাখো মানুষ অপরক্ষা করছে সেখানে তাদের বঞ্চিত করে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না!’ মুহুর্মুহু ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ আর ‘খালেক ভাই এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’ শ্লোগানে প্রকম্পিত সভাস্থল। মন্থর গতিতে এগিয়ে চলেছেন নেতা মঞ্চের দিকে। একি! জনতার ভীড়ের মাঝেই হঠাৎ লুটিয়ে পড়লেন নেতা! জনতার নেতা জনতার মাঝেই বিলীন হয়ে গেলেন চিরতরে!

মৃত্যূও বুঝি এমন কাব্যিক হয়! অবিশ্বাস্য! অবিস্মরণীয়! রীতিমতন রোমাঞ্চিত শিহরিত হয়েছি এ দৃশ্য কল্পনা করে, যতবার ভেবেছি ততবারই গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেছে। অমন নায়োকোচিত মৃত্যূ বুঝি হলিউডি ফিল্মকেও হার মানায়! জনতাও দিয়েছে তার এই আমৃত্যূ ভালোবাসার প্রতিদান উজাড় করে। গোটা কক্সবাজার শোকাচ্ছন্ন। আবালবৃদ্ধবনিতার অশ্রুজলে সিক্ত সমূদ্র কন্যা। উত্তাল জনতা। জনতার এক দাবী, নেতার উত্তরাধিকার চাই তারই পরিবার হতে। কারণ জনতা প্রিয় নেতার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেতে চেয়েছিলো আপন কারো মাঝে। শ্লোগানে শ্লোগানে গোটা কক্সবাজার মুখরিত। হাতে হাতে কলাগাছ। সমূদ্রকন্যা যেনো আজ বিস্তির্ণ এক কলাবাগান! প্রিয় নেতার নামে কালগাছেকে মনোনয়ন দিলে জনতা সেই কলাগাছকেই নির্বাচিত করবে! সে এক অভাবণীয় পরিস্থিতি। কি দুর্বার জাদুকরি সম্মোহনি আকর্ষন থাকলে পরে জনতার অমন ভালোবাসা মেলে!
ধন্য হে নেতা।
ধন্য সে গর্ভধারিনী মা। মহান নেতার যোগ্য সহধর্মিনী সেই মহিয়সির সাহচর্যে সন্তানের মধ্যেও তিলে তিলে প্রস্ফুটিত হয়েছিলো প্রকৃত জননেতা হওয়ার সকল গুণাবলী।
এহেন বীরোচিত প্রস্থান প্রিয় নেতাকে করেছে আরো মহীয়ান।
অমন মৃত্যূই বুঝি তাঁকে মানায়।
ইতিহাসের ক’জন নেতার ভাগ্যে জুটেছে এ দুর্লভ সম্মান সে গবেষনার বিষয়।
কি আমল করলে না জানি সর্বশক্তিমান কাউকে দুনিয়াতেই এ বিরল সম্মানে সম্মানিত করেন!!

ভাবা যায় কোন সে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আমরা হারিয়েছি? তাঁকে নিয়ে লিখা ফুরোবার নয়। আমার বিশ্বাস আজও তিনি যথাযথভাবে অক্ষরে চিত্রিত হননি। অধমের অগা ঘটের আগডুম কলামে ক্ষণজন্মা এই জনতার মাহনায়ককে চিত্রনের যে দুঃসাহস দেখিয়েছি তার জন্যে পাঠককূলের কাছে করজোরে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এ ছিলো আমার মুগ্ধতার ছিটে আবেগের দুর্বল প্রকাশ মাত্র।
আহা আফসোস, অমন সোনার মানুষ এ পুড়ো জাতি যদি আরো কিছু পেতো……………পাবে কি? মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়েসেই মানুষটার যে কর্মপরিধি এবং প্রাপ্তি, শ্রদ্ধায় মাথা অজান্তেই নুইয়ে যায়। লুকোবোনা, বুকের কোথাও সুক্ষ হিংসে বোধও হয় বৈকি।

হৃদয়ের গভীরতম প্রকোষ্ঠ থেকে দো’য়া,
মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁকে কবুল করুন, জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করুন, আমীন।


# লেখক: মরহুম অধ্যাপক এন এম হাবিব উল্লাহ এর জ্যেষ্ঠ পুত্র।